রূপ-সৌন্দর্য ও মেধা কাজে লাগিয়ে মাত্র ২৫ বছরেই কোটিপতি বনে গেছেন ফারহানা আক্তার পাপিয়া। না, কোন বৈধ পথে নয়, মাদক ব্যবসা করেই তার এই প্রতিপত্তি। কয়েক বছরেই নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ উপাধি। দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই ঢাকার তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার (৭ জুন) মাদক ব্যবসায়ী স্বামীসহ পাপিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লার আবু হানিফের মেয়ে এই পাপিয়া। তার বেড়ে ওঠাও আজিজ মহল্লার জয়েন্ট কোয়ার্টারে। হাইস্কুলে পড়ার সময়ই জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন ওরফে পাঁচুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পাপিয়া। বেশ কিছুদিন প্রেমের পর বাচ্চুর সঙ্গেই বিয়ে হয় তার।
বউ হয়ে পাঁচুর সঙ্গে তার জেনেভা ক্যাম্পের বাসায় আসেন পাপিয়া। কিছুদিন সংসার করার পরই পাপিয়াকে মাদক ব্যবসায় সাহায্য করার প্রস্তাব দেন পাঁচু। নারী বলে তাকে কেউ সন্দেহ করবে না এবং খুব সহজেই তার মাধ্যমে ব্যবসার বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে এমন চিন্তা করেই তাকে ব্যবসায় টেনে আনেন পাঁচু।
ব্যবসায় আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মাদক কারবারে দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে উঠেন পাপিয়া। ব্যবসার প্রসারের ক্ষেত্রে শুধু বুদ্ধি নয় নিজের রুপ-যৌবনও কাজে লাগান তিনি। হেরোইন-গাঁজার পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসাও শুরু করে দেন।
পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায় আরেও অনেক সুন্দরী তরুণীকে যুক্ত করেন পাপিয়া। এক সময় নিজেই ওই ব্যবসার হাল ধরে গড়ে তোলে পাপিয়া সিন্ডিকেট। এরপরই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন তালিকায় শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে উঠে আসে পাপিয়ার নাম।
মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন পাপিয়া। শুধু মাদক নয়, অবৈধ অস্ত্রের সমাহারও রয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী তকমা পাওয়া এই তরুণীর কাছে। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, ইকবাল রোড, পুরান থানা রোড, জহুরি মহল্লা, জয়েন্ট কোয়ার্টার, টিক্কাপাড়া, কৃষি মার্কেট, পাকা ক্যাম্প, পিসিকালচার ও শেখেরটেকের মানুষ এক রকম জিম্মি হয়ে ছিল পাপিয়ার অস্ত্রধারী বাহিনীর কাছে। তার সিন্ডিকেট ওইসব এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে আসছিল।
বৃহস্পতিবার রাতে লালবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেনেভা ক্যাম্পের সেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন পাঁচু ও তার স্ত্রী মাদক সম্রাজ্ঞী ফারহানা আক্তার পাপিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। এসময় তাদের কাছ থেকে ২০,০০০ পিস ইয়াবা, ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।
যদিও জেল খাটার অভ্যাস নতুন নয় মাদক সম্রাজ্ঞী তকমা পাওয়া পাপিয়ার জন্য। এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু যতবারই আটক হয়েছেন, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিছুদিন কারাভোগের পর আবারও ফিরে এসে জড়িয়েছেন অবৈধ মাদক ব্যবসায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পাঁচু ও তার স্ত্রী পাপিয়া। তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ও মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে বেশকিছু মামলা রয়েছে।